জালে হাজারো ভিআইপি
জালে হাজারো ভিআইপি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাজারেরও বেশি ভিআইপির বিরুদ্ধে চলছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত। এরই মধ্যে দুই শতাধিক মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। সম্পন্ন হয়ে এসেছে বেশ কিছু অনুসন্ধানও। অভিযোগ পাওয়া মাত্র প্রতিদিনই মামলা ও অনুসন্ধানের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। সেই তালিকায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার অফিসের পিয়নের নামও রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও ধরা পড়েছেন দুদকের জালে। রেহাই পাচ্ছেন না দুর্নীতিতে জড়িত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী কালবেলাকে বলেন, দুদক সাধারণত প্রাপ্ত অভিযোগ এবং নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান ও পরে মামলার পর তদন্ত করে। ৫ আগস্টের পর আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যক্তিপর্যায় থেকে এসেছে সেগুলো আমরা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছি। বেশ কিছু মামলাও হয়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্ত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপি। অতিউৎসাহী কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপারে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। উচ্চাভিলাষী অপেশাদার কিছু আমলা ও সামরিক কর্মকর্তার নামও রয়েছে তালিকায়। এ ছাড়া যারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ পাচার করেছে কমিশন সেগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছে।
দুদক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহেনা, ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের (৫৯ হাজার কোটি টাকা) বেশি আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। দুর্নীতির মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেজা ও বেপজার আট প্রকল্প থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিববর্ষ পালন ও ভাস্কর্য নির্মাণ, পূর্বাচলে অনিয়মের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দসহ বিভিন্ন অভিযোগে পৃথক তদন্ত ও মামলার মুখে পড়েছেন হাসিনা ও তার পরিবারের একাধিক সদস্য। কোনো কাজ না করে প্রকল্পের ৩১৫ কোটি টাকা লোপাট ও সরকারি আট প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও চলছে অনুসন্ধান।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিগত সরকারের ৪১ জন মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে আরেকটি অনুসন্ধান চলছে দুদকে। এর অংশ হিসেবে ১৬টি মামলা হয়েছে এবং তিনজনের সম্পদ বিবরণী জারি হয়েছে। এ অনুসন্ধান ও তদন্তের আওতায় আছেন হাসানুল হক ইনু, শেখ হেলাল উদ্দিন, আনিসুল হক, দীপু মনি, টিপু মুনশি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, জাহিদ মালিক, নসরুল হামিদ বিপু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মেহের আফরোজ চুমকি, স্বপন ভট্টাচার্য্য, আবু সাঈদ আল মাহমুদ, শেখ তন্ময়ের মতো প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে নানা অভিযোগে আরও একাধিক তদন্ত ও অনুসন্ধান চলমান।
বিআরটিসির ১৩৭ বাস কেনায় কারসাজির অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর বিরুদ্ধে। নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্য এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ৫ মামলায় তদন্ত চলছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে।
What's Your Reaction?






